ভূগোল মতে দেশ হল একটি ভৌগোলিক অঞ্চল। এই দেশ শব্দটি প্রায়সই রাজনৈতিক বিভাগ বা সার্বভৌমিক রাষ্ট্র অঞ্চল বা সাবেক রাজনৈতিক বিভাগের ভৌগোলিক অঞ্চলকে সূচিত করে। সাধারণ ভাবে দেশ বলতে সার্বভৌমিক রাষ্ট্র-এর ধারণার সাথে মিলে যায় এবং যা রাষ্ট্র ,জাতি বা সরকারের সঙ্গে সংযুক্ত।


দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী, ক্রমশ উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি এবং বিশ্বের একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ব্রাজিল।

গত কয়েক বছরে লাখো মানুষকে দারিদ্র থেকে তুলে আনতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ব্যবধান এখনও অনেক বেশি।

আমাজন বনে বনাঞ্চল হ্রাস নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ রয়েছে। এই বনের বেশিরভাগ অংশ ব্রাজিলে অবস্থিত। কারণ পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন বিশ্বের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

পর্তুগালের উপনিবেশ থাকা ব্রাজিলে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে আদিবাসী আমেরিকান, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত দাস ও ইউরোপীয় সেটেলাররা।

ব্রাজিলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

রাষ্ট্রীয় নাম: ফেডেরেটিভ রিপাবলিক অব ব্রাজিল

রাজধানী: ব্রাসিলিয়া

আয়তন: ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৭৬৭ বর্গকিলোমিটার

জনসংখ্যা: ২১ কোটি ৭২ লাখ

ভাষা: পর্তুগিজ

আয়ুষ্কাল: ৭২ বছর (পুরুষ), ৭৯ বছর (নারী)।

প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা

প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা ‘লুলা’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। এর আগে তিনি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হন। প্রবীণ বাম ঘরানার এই রাজনীতিক ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের নেতৃত্বে ছিলেন। গত বছর অক্টোবরের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডানপন্থি ও বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে তিনি পরাজিত করেন।


প্রায় এক দশক পর ক্ষমতায় ফিরেন লুলা। দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে থাকতে হয়েছে থাকে। তবে ২০২১ সালে তিনি খালাস পান। 

নির্বাচনে বলসোনারোর বিতর্কিত বন্দুক আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, তার সরকার প্রতিশোধের চেতনায় কাজ করবে না। কিন্তু যারা ভুল করেছে তাদের জবাব দিতে হবে।

সংবাদমাধ্যম

দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম মিডিয়া বাজার দাপট হলো টেলিভিশনের। মিডিয়ার মালিকানা অল্প কয়েকজনের হাতে রয়েছে। সম্প্রচার ও দৈনিক পত্রিকার নিয়ন্ত্রণ গ্লোবো-এর মতো করপোরেট জায়ান্টদের হাতে।

সংবিধান সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। মিডিয়া নিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, সাংবাদিকদের জন্য অন্যতম সহিংস দেশ হলো ব্রাজিল।

বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে উৎসাহী জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম হলো ব্রাজিলীয়রা।

ব্রাজিলের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

১৫০০: অঞ্চলটিতে অবতরণ করে পর্তুগিজরা এবং পর্তুগিজ রাজ্যের অংশ হিসেবে দাবি করে।

১৮২২: পর্তুগিজ রাজার ছেলে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি নিজেকে ব্রাজিলের সম্রাট পেড্রো প্রথম হিসেবে ঘোষণা করেন।

১৮৮৮: দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়। এক বছর পরে ব্রাজিলের রাজতন্ত্র উৎখাত হয় এবং একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের দশকগুলোতে ইউরোপীয় কফি বাগান মালিকদের দ্বারা সরকার প্রভাবিত ছিল।

১৯৩০: জাতীয়তাবাদী এবং কমিউনিস্ট-বিরোধী গেটুলিও ভার্গাস একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসন রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন শিল্পায়ন এবং সামাজিক কল্যাণে উন্নতি সাধন করে।

১৯৩৯-৪৫: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ব্রাজিল নিজেকে নিরপেক্ষ ঘোষণা করে কিন্তু ১৯৪৩ সালে মিত্রদের সঙ্গে যোগ দেয়। ব্রাজিলের সেনাবাহিনীর একটি অংশ ইতালিতে লড়াই করছে।

১৯৪৫: একটি অভ্যুত্থানে ভার্গাস উৎখাত হন। এতে গণতান্ত্রিক শাসন পুনরুদ্ধার হয়। দ্বিতীয় ব্রাজিলীয় প্রজাতন্ত্রের সূচনা করে।

১৯৬০: রিও ডি জেনিরো থেকে নতুন নির্মিত শহর ব্রাসিলিয়াতে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়।

১৯৬৪: বামপন্থি প্রেসিডেন্ট জোয়াও গৌলার্ট একটি অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এতে দেশটিতে দুই দশকের সামরিক শাসনের শুরু হয়। সামরিক শাসনে বাকস্বাধীনতা রোধ এবং বিরোধীদের নির্যাতন করা হয়। এই সময় অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটে।

১৯৮৫: বেসামরিক সরকারের দেশটির প্রত্যাবর্তন।

১৯৮৮: নতুন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়।

১৯৮৯: ১৯৬০ সালের পর সরাসরি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন ফার্নান্দো কলার ডি মেলো।

১৯৯৭: প্রেসিডেন্টকে পুনঃনির্বাচনে লড়াই করার অনুমতি দিতে সংবিধানে পরিবর্তন।

২০০২: ৪০ বছরের বেশি সময় পর ব্রাজিলে প্রথম বামপন্থি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা।

২০১৬: একটি অভিশংসনের বিচারে আর্থিক অনিয়মের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে লুলার অপসারণ। তার মিত্র দিলমা রুসেফ প্রেসিডেন্ট হন।

২০১৮: উগ্র জাতীয়তাবাদী জইর বলসোনারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

২০২২: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হয়ে ক্ষমতায় ফিরেন লুলা। ফ্লোরিডাতে বলসোনারোর অবস্থান।

২০২৩  জানুয়ারি: হাজার হাজার বোলসোনারো সমর্থক ব্রাসিলিয়াতে সরকারি ভবন ভাঙচুর করে। তাদের কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়। সরকার দায়ীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেয়।


সূত্র: বিবিসি